কিডনি আমাদের শরীরে খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।এটি আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় ফিল্টারের সাহায্যে। এটি শরীরে হরমোন তৈরি করে যা শরীরের অন্যান্য ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে যেমন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে শরীরে রক্ত তৈরি করে। কিন্তু সেই কিডনি যদি অকেজো হয়ে যায় তবে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।
কিডনি আমাদের আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ক্যালসিয়াম সোডিয়াম পটাশিয়াম এর সমতা রক্ষা করে। সে কিডনি যদি কাজ না করতে পারে তবে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিডনি কার্যপ্রণালী যখন ধীরে ধীরে কমতে থাকে তখন তা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অসুখ বা সিকেডি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যায়। কিডনির অসুস্থতা যখন বাড়তে থাকে তখন এর যে কাজ অনেক কমতে থাকে অর্থাৎ রক্ত পরিশ্রুত করণ তা আর কিডনি করতে পারেনা ।কিডনি অসুস্থ হওয়ার প্রধান দুটি কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনির অসুস্থতা প্রথম পর্যায়ে দেখা যায় না এটা সাধারণত নিয়মিত রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পরে।
আবার অনেক সিকেডি ধরা না পড়ার কারণে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় প্রসাবে রক্ত দেখা যায় পেশিতে টান ধরে বারবার প্রস্রাব ত্যাগ করতে হয় সামান্য কাজ করলেই ক্লান্তভাব চলে আসে। কিডনি অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে জীবনশৈলীর পরিবর্তনের একটা ভূমিকা রয়েছে। তবে কিডনি অসুস্থতা শেষ পর্যায়ে পৌঁছালে তা কিডনি ফেইলরের পর্যায়ে চলে যায় তখন কিডনি ডায়াগনসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। কিডনি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাই কিডনি সংক্রমণ সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য 10 টি ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
পানির অপর নাম জীবন ।পানি ছাড়া আমরা চলতে পারি না পানি আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে পানি আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে ।পানি হচ্ছে আমাদের শরীরে মিরাক্কেল হিসেবে কাজ করে ।পানি পান করার মাধ্যমে কিডনি তার ছাঁকনির সাহায্যে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের করে দেয় তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত পর্যাপ্ত পানি পান করা।
হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ ।রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন 130/80 থাকলে তা কিডনির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে না কিন্তু যদি এর বেশি হয় তবে কিডনির ওপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে ।তাই আমাদের কিডনির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা :
কিডনি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যেন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক থাকে এবং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করতে হবে ।তবেই কিডনির সংক্রামন রোধ সম্ভব।
শারীরিকভাবে নিজেকে সক্রিয় রাখুন:
কিডনিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করা । শারীরিক পরিশ্রম করা এতে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বৃক্কের রোগ গড়ে ওঠার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
আমাদের অনেকের বয়স ও উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হয়ে থাকে। যা কিডনির উপর একটি খারাপ প্রভাব ফেলে তাই আমাদের সকলের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সে অনুযায়ী খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলা।
সুষম খাদ্য গ্রহণ:
কিডনির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে ।যে সকল খাদ্য আমাদের কিডনি ভালো রাখে সে সকল খাদ্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিবেশন করতে হবে যেমন আপেল ,কমলার জুস, আদা ,রসুন, পিয়াজ ,ধনিয়া পাতার জুস ইত্যাদি। এসকল খাবার আমাদের অবশ্যই কিডনি সুস্থ রাখার জন্য গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন ত্যাগ করা:
অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য যেমন গরুর মাংস খাসির মাংস কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন খেলে রক্তে চর্বি জমাট বাঁধতে পারে এতে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যা আবার কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন পরিহার করতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ সিগারেট ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান বহু রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কারণ এটি বৃক্কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এছাড়া কিডনি সমস্যার পেছনে ধূমপান কারণ হয়ে ওঠে আবার মদ্যপান সিকেডি এর সাথে জড়িত। ধূমপান ও মদ্যপান করলে
ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ থাকা ব্যক্তিদের কিডনির অবস্থা শোচনীয় হয়। তাই ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
ওষুধ সেবনে সতর্ক থাকুন :
আমরা অনেক সময় নিজে থেকে নিয়মিত দোকানে গিয়ে ঔষধ ক্রয় করে ওষুধ সেবন করে থাকি। অতিরিক্ত ওষুধ সেবন বিশেষ করে ব্যথানাশক ঔষধ যা আমাদের কিডনির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে: সাধারনত প্রথমদিকে কিডনি সমস্যার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা যায় না। ফলে রোগী বুঝতে পারে না যে তার কিডনি অসুস্থ যখন ধরা পড়ে তখন দেখা যায় অনেক খারাপ অবস্থায় চলে গেছে তাই আমাদের উচিত প্রতি বছর একবার করে হলেও বৃক্কের পরীক্ষা করা যেন কোন সমস্যা হলে তা দ্রুত ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তাই আমাদের “CKD” রুখতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বৃক্কের যত্ন নিতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।
সর্বশেষ কথা:
মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ হলো কিডনি। যা আমাদের শরীরের সকল ভারসাম্য বজায় রাখে ।সে ক্ষেত্রে কিডনি হচ্ছে আমাদের শরীরের ভাইটাল অঙ্গ হিসেবে কাজ করে ।
কোন রোগ ছোট না সেটা সামান্য হোক বা বেশি ক্ষত হোক কারণ রোগ হীন শরীর রাখতে আমাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে হবে তাই আমাদের সকলের উচিত উপরিক্ত কিছু বিষয় খেয়াল রাখা এবং কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া তবেই আমাদের কিডনিকে আমরা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব ।ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন ও সুস্থ রাখুন সকলকে।
সারমর্ম:
কিডনির সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আপনার কি কোনো ধারণা আছে? যদি না থাকে, তাহলে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি। এই নিবন্ধে, আপনি কিডনি সংক্রমণের জন্য 10 টি ঘরোয়া প্রতিকার জানতে পারবেন যা আপনাকে অবশ্যই সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।