রোজা রাখা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন উত্তম, ঠিক তেমন’ই শারীরিক সুস্থতার জন্য’ও প্রমাণিত সাইন্টিফিক কার্যকরী ব্যবস্থা।
বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে’ যে সকল মানুষ নিয়ম করে পরিমিত আহার গ্রহণ করেন এবং রোজা/ফাস্টিং করেন সেই সকল মানুষ কেবল শারীরিকভাবেই উপকৃত হন না বরং মানসিক এবং আত্মিক ভাবেও প্রশান্তি-প্রফুল্লতা-আনন্দ অনুভব করেন।
রোজা রাখা মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রব্বুল আলামীন কতৃক প্রদত্ত একটি বিধান। আল্লাহ-তায়ালা নির্দেশকৃত প্রতিটি বিধান মানব জাতির জন্য কল্যাণকর এবং আশীর্বাদ স্বরূপ। যেটা কিনা সর্বজনীন ভাবে আধুনিক এ বিজ্ঞানের সময়ে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত।
নবী করীম হজরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সা.) বলেছেন, ইসলামিক জীবন ব্যবস্থায় মানুষের উপার্জনকৃত সম্পদের উপর যেমন যাকাত আছে; ঠিক তেমনি রেজা হচ্ছে শারিরীক সম্পদের যাকাত। অতএব, আমাদের রোজা রাখা উচিত।
আমরা সবাই জানি যে শরীরকে সচল রাখতে খাবারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এই খাবারই যদি নিয়মিত এবং পরিমিত না হয়, বা’ অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে সেটা শরীরে শক্তি জোগানোর পরিবর্তে রোগের সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সময়ে অসময়ে অসম খাবার গ্রহণ হজম প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। চিকিৎসাকেরা এ বিষয়ে একমত যে, শরীরের অধিকাংশ রোগ সৃষ্টি হয় মানুষের অ-নিয়ম তান্ত্রিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসের ফলে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, মানব দেহের রোগের এ’ উপসর্গ এবং কারণগুলো আমাদের প্রিয় নবীজী হযরত মোঃ (সা.) বহু শতাব্দী পূর্বেই আমাদেরকে জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন মানুষের সকল রোগের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে পেট,
অতিরিক্ত এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এড়িয়ে চলার মাঝেই আছে মানব দেহের সুস্থতা। এর’ই বিবেচনায় রোজা মানবজাতির চারিত্রিক এবং শারীরিকভাবে কিছু বিষয় পরিত্যাগ করার শিক্ষা দেয়।
সারা বছরব্যাপী অপরিমিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে শরীরে যে অতিরিক্ত মেদ জমে থাকে তা রোজা রাখার ফলে দূরীভূত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের শরীরে এইচডিএল (high-density lipoprotein) এবং এলডিএল (low-density lipoprotein) পাওয়া যায়।
এই এইচডিএল এমন ফ্যাট যা বহু রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ক্ষতিকারক নয়। রোজা রাখার ফলে এইচডিএলের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। বিপরীতে এলডিএল, যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে চরম ক্ষতিকারক। রোজা রাখার ফলে এটা হ্রাস পেতে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকত্ব এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।
রোজা রাখার ফলে মানব দেহে ইউরিক অ্যাসিড এবং রক্তের ইউরিয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। যা কিনা শরীরে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের কারণ হয়ে থাকে।
আসল কথা হল রোজা কেবলমাত্র সারাদিন উপোস থেকে নির্ধারিত সময়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের নাম নয়। রোজা রাখা একটা জীনব বিধান’ও বটে। রোজা হচ্ছে সংযম চোখ- হাত-পা-কথা বলা- চিন্তা চেতনার সংযম
ফলে এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা শারীরিক-মানুষিক সহ চারিত্রিক বহুবিধ রোগব্যাধি থেকেও আমাদের রক্ষা করেন।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে ১৬-১৭ ঘণ্টা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকার ফলে শরীরের অঙ্গগুলো স্বাভাবিক হতে থাকে,শরীরে অক্সিজেন লেবেল বৃদ্ধি পায় এবং পাচনতন্ত্রের উন্নতি হয় এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, যেমন- গ্যাস, বদহজম, লিভারের রোগ, জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি ইত্যাদি বহুলাংশে কমে যায় এবং ভালো হয়ে যায়। মানুষ শরীরের কার্যক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় শরীরে অর্গান গুলো পুণঃজীবন ফিরে পায়।