মেডিটেশন করবার নিয়ম বা প্রনালী

মেডিটেশন হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ব মনের অসীম ইতিবাচক শক্তিকে কল্পনার জগতে কল্পিত করে বাস্তবতায় রূপদান ।

প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি ছোট ছোট ধাপ মেনে নিজে নিজেই মেডিটেশন চর্চা শুরু করতে পারেন। শুরুতেই মেডিটেশনের জন্য কোনো নিরিবিলি জায়গা বেছে নিন মোবাইল সাইলেন্ট করে নেয়াই ভালো স্থানটিতে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে খেয়ালে রাখুন। শরীরের পোশাক ঢিলেঢালা হলে ভালো। শক্ত বিছানা, কার্পেট বা মেঝেতে মাদুর পেতে বসতে পারেন। অসুবিধা বোধ হলে শুয়ে’ও করা যেতে পারে শুয়ে করলে চিত হয়ে শোবেন হাত দু’টো থাকবে পাশে আরাম করে নিজের সুবিধা বুঝে আর চেয়ারে বসলে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন এ ভাবে বসলে শরীরে রক্ত চলাচল এবং অক্সিজেন লেবেল ঠিক ভাবে হয় এবং পা যেন খালি থাকে এবং অবশ্যই মাটিতে লেগে থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখুন।

শুরুতেই মাহান সৃষ্টির কর্তার নামে শুরু করুন এবং তার অসীম নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে এবং তার’ই কাছে সাহায্য এবং বরকত কামনা করুন।

আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন আনন্দদায়ক স্মৃতি মনে মনে ভাবুন এবং সেই আনন্দকে উপলব্ধি করবার চেষ্টা করুন। এবার হালকাভাবে আলতো করে চোখ বন্ধ করুন জোড়াজুড়ি করবার একদমই দরকার নাই আস্তে আস্তে লম্বা করে নাক দিয়ে দম নিন এবং খুবই ধিরে ধিরে মুখ দিয়ে সেই দম ছা-ড়ু-ন…..।

দম নেবেন পেটের উপরিভাগে এবং দম নেওয়ার সময় পেটের উপরিভাগ ফুলে উঠবে আবার দম ছাড়বার সময় পেট খানিকটা চুপসে যাবে। এভাবে ১০ বার দম নিন এবং ১০বার দম ছা-ড়ু-ন…….।

এরপর দম স্বাভাবিক হতে দিন এবং স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস প্রশ্বাস চালিয়ে যান ভাবতে থাকুন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতংগ শরীরের প্রতিটি পেশী শরীরের প্রতিটি অরগ্যান রিল্যাক্স আরাম বোধ করছে এবং শিথিল হালকা হয়ে আসছে। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিন এরপর আপনার পুরোটা মনযোগ শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে দিন নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন এবং বেশ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নাক দিয়েই দম ছা-ড়ু-ন….. দম নেওয়ার থেকে ছাড়ার জন্য একটু বেশি সময় নিন।

দম স্বাভাবিক হতে দিন। শরীরের আরাম বোধকে ফিল করুন শরীরের হালকা ভাবকে এন্জয় করুন এবং শ্বাস প্রশ্বাস এর দিকে খেয়াল করুন লক্ষ করুন কীভাবে অক্সিজেন নাকের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে ঢুকছে ফুসফুস পূর্ণ ভাবে সুন্দর ভাবে কি অক্সিজেনকে আপনার সমস্ত শরীরে পাম্পিং করে ছড়িয়ে দিচ্ছে আবার নাক দিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইড বেরিয়ে যাচ্ছে। মন বিক্ষিপ্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে চালিয়ে যান এবং শুধু মাত্র শ্বাস নেয়া-ছাড়া এই দিকে মনোযোগ দেন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়াটাও একপ্রকার মেডিটেশন এ ভাবে করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং মন স্থির হয়। কয়েক দফা দম অবলোকন বা খেয়াল করার পর দেখবেন শরীর শীতল ও ভারী অনুভব হচ্ছে
এটিই ধ্যানস্থ অবস্থা বা মেডিটেটিভ লেভেল।

এ অবস্থায় মন যেকোনো কাজ সম্পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে করতে পারে এবং মন অসীম শক্তির আধার হয়ে উঠে এ অবস্থায় আমাদের কাজের পরিকল্পনা, রাগ-ক্ষোভ-দুশ্চিন্তা দূর করা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা রোগ থেকে মুক্তি মনের আশার বাস্তব রূপ ইত্যাদি কাজ বেশ ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। দিনে দুবার সঠিক ভাবে মেডিটেশন চর্চা করলে মেডিটেশনের পরিপূর্ণ সুফল বাস্তব জীবনে পাওয়া যায়। গাইডেড মেডিটেশন এ ছাড়া সিডি, এমপিথ্রি, উটিউবে, সোসাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন রকম মেডিটেশন পাওয়া যায়। এগুলো দেখে বা শুনে বক্তার কথা অনুসারে দম নেওয়া, দম ছাড়া ও অবলোকনের মাধ্যমে সহজেই ধ্যান বা মেডিটেশন করা যায়।

সতর্কতা মেডিটেশনের করবার সময় সর্বদা ইতিবাচক চিন্তা করা উচিত। নিজের ও অপরের জন্য কল্যাণকর এমন কাজ সম্পর্কে ভাবা, পরিকল্পনা করা, দোয়া বা প্রার্থনা করা উচিত। মেডিটেশনের সময় যদি অতিরিক্ত মাথাঘোরা,বমি ভাব শ্বাসরোধ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা হয়, তবে সেই মুহূর্তেই মেডিটেশন বন্ধ করে দেবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

Leave a Comment