ইসলামের অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে রোজা, চলছে রমজান মাস। এটা মুসলমানের জন্য একটি পবিত্রতম মাস। যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের খবার-পানীয় থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখেন এবং পাশাপাশি চারিত্রক ও অংগোগত আচরণে সংযমী হন।
ইসলামের উপর আস্থাবাদি মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে রমজানে স্বেচ্ছায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ আর বেশি সময় ধরে প্রার্থনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
আপাতদৃষ্টিতে রোজা/ফাস্টিং:
সহজ সরল একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয় মনে হলেও রোজা রাখবার বিধান গুলো সঠিক ভাবে পালন করলে শারীরিক সুস্থতা এবং আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায় সেই বিষয়টি এখন সাইন্টিফিক ভাবেও প্রমাণিত।
সাধারণ মানুষের মধ্যে রোজা নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে আর সে সকল বিষয় নিয়ে মতভেদ’ও প্রচুর। আর তাই রোজা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা আলোচনা করা হলো।
প্রথম ভুল ধারণাঃ “দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায় “
অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। অল্প পরিমান এবং সুগন্ধি বিহীন পেষ্ট ব্যবহার করাই ভালো তবে মেসওয়াক ব্যবহার করাই উত্তম।
দ্বিতীয় ভুল ধারণাঃ ” মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না “
ইসলামি স্কলারদের মতে মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নাই।
নিজের মুখের লালা নিজের পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গে না। বরং ইসলামে রোজার সময় মুখের লালা খাওয়া উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে, অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না।
তৃতীয় ভুল ধারণা “শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে “
কেবলমাত্র আহার এবং পনি পান থেকে বিরত থাকলেই রোজা কবুল হবে এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়, রোজা হচ্ছে সংযম সেটা নফস্ তথা চারিত্রিক এবং আচরণ গত সংযম হতে হবে। কিছু অপরাধ মানুষের জিহ্বা দিয়ে হয়
আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে। ঠিক তেমনি চোখের নজরকেও সংযত করতে হবে।
চতুর্থ ভুল ধারণাঃ “অসাবধানতা-বশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়”
আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা ঠিক থাকবে, যদি না’ আপনি বোঝার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দেন।
কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি অনিচ্ছাকৃত-ভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এ রকম ভুল এড়ানো সম্ভব। এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না’ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।
পঞ্চম ভুল ধারণাঃ ” ঔষুধ ব্যবহার করা যাবে না “
মুসলিম ওলামা একরামদের মত রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ। কিছু কিছু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন প্রয়োজনে শ্বাস ক্রিয়ায় ব্যবহৃত ইনহেলার’ও গ্রহন করা যায়।
তবে রোজা রেখে মুখে খাওয়ার কোন ঔষধ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। সে সব ঔষধ সেহেরির আগে এবং ইফতারির পরে খেতে হবে। তবে কেউ যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবেতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা?
পবিত্র কোরআন শরীফে স্পষ্ট’ই বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলুন।
ষষ্ঠতম ভুল ধারণাঃ “যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে”
ইসলামিক জীবন বিধানে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। তবে সুস্থ এবং স্বাভাবিক হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙ্গা রোজাগুলো অবশ্যই পালন করে নিবেন এটাই বিধান। অন্যদিকে যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন ফিদা অর্থাৎ গরীবকে দান করার বিধান রয়েছে। এবং সেই দান অবশ্য স্থান কাল/সময় দেশ ভেদে টাকার মূল্যায়নে বিভিন্ন হয়ে থাকে।