আধুনিক বিজ্ঞান রোজা বা ফাস্টিং নিয়ে কি বলে?

মোটামুটি সকল ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকেই “ফাস্টিং” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর’ই পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ভাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে’ও রোজা বা ফাস্টিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজা রাখার অভ্যাসে উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা ধরনের হার্টের জটিলতা দূর হয়। মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ইতিবাচক জীবনদর্শনে’ও রোজা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালনে সহায়ক।

রোজা বা ফাস্টিং এর সময়ে যেহেতু খাবার থেকে বিরত থাকা হয় তখন আমাদের শরীরের কোষ গুলো বাহির থেকে কোনো খাবার পায় না’ ফলে একটা নিদৃষ্ট সময় পর শরীর নিজেই নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পরিস্থিতিকে বলা হয় অটোফেজি।

রোজা বা ফাস্টিং নিয়ে বিস্ময়কর অটোফেজি” তথ্য মানুষের সামনে নিয়ে এসে ২০১৬ সালে ওশিনরি ওসুমি নামক একজন জাপানি গবেষক ও বিজ্ঞানী নোবেল পেয়েছিলেন।

প্রচলিত গতানুগতিক জীবন যাপনের খাদ্য অভ্যাসের ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমা হয় এবং সেই সাথে বাড়ে ক্ষতিকারক টক্সিনের মাত্রাও। কিন্তু দীর্ঘ একটি মাস রোজা রাখলে এ সমস্যা থেকে অনেকাংশেই বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. শেলটন তার ‘সুপিরিয়র নিউট্রিশন’ গ্রন্থে বলেছেন, ফাস্টিং করবার ফলে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করাজাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর ক্ষতি নয়; বরং পুষ্টি বিধান হয়।

অন্যদিকে ডা. আইজাক জেনিংস বলেছেন, যে সকল মানুষ আলস্য,গোঁড়ামির এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই করছে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে তাদের জন্য ফাস্টিং হচ্ছে বিপদ থেকে রক্ষার হাতিয়ার।

বিশ্ব বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ফুসফুসের সমস্যা, ক্রনিক কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সমূহ ফাস্টিং করবার ফলে সহজেই নিরাময় হয়।

রোজা রাখবার ফলে ক্রনিক পেপটিক আলসারের রোগীরা উপকৃত হন। বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তার ক্লিভ তার লিখত “পেপটিক আলসার” নামক গবেষণামূলক বইয়ে লিখেছেন: ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়ায় অন্যসব এলাকার তুলনায় মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ অনেক কম। কারণ, তারা দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করেন।

হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোজা অত্যন্ত উপকারী। কিডনি সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও রোজা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। রোজা রাখবার ফলে কিডনিতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়। ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের পেশীগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

রোজায় মানসিক অস্থিরতা দূর হয় মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড মনে করেন, রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে। কারণ, রোজা শারীরিক সক্ষমতা তৈরির পাশাপাশি এনে দেয় মানসিক প্রশান্তিও।

পরিশেষে এটা’ই বিবেচ্য যে’ ১৪০০ বছর আগে মুসলিম জীবন দর্শনে রোজা’র রেওয়াজ শুরু হয়েছিল, যা’ কিনা একই সঙ্গে বিজ্ঞান ভিত্তিক, স্বাস্থ্যসম্মত, মানসিক এবং ঐশ্বরিক প্রশান্তির আধার। রোজা বা ফাস্টিং এর উপকারিতা এতো বেশি যার ফলে ইসলাম ধর্মে একে অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ হিসেবে ধরা হয়েছে। আর এ জন্য’ই ইসলামের জীবন বিধানকে একটি পূর্ণাংগ জীবন বিধান’ও বলা হয়।

Leave a Comment