রাসুলুল্লাহ (স) রমজান মাসে বেশি বেশি প্রার্থনা করতে বলেছেন। বায়হাকি এবং সহীহ ইবনে খুযায়মাসহ একাধিক হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, ‘রমজান মাসে তোমরা বেশি বেশি পাঠ করো – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নাই) ও আস্তাগফিরুল্লাহ (ক্ষমা করো আল্লাহ বা দয়াময় ক্ষমা করো) এবং আল্লাহ্-এর কাছ থেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই ও জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করো। এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, মধ্যম দশক মাগফিরাতের আর শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির।’

রোজার আরবি শব্দ হলো সাওম, যার আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা, সংযত থাকা, উপবাস থাকা ইত্যাদি। পরিভাষায় সাওম বলা হয়, প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ, মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী-সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং রমজান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকিম, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাস মুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমজানে রোজা রাখা ফরজ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থাৎঃ- হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। (সূরা বাকারা-১৮৩)

নামকরণঃ- রমজান একটি আরবি শব্দ, এর শব্দমূল হলো রা-মীম-দোয়াদ। আরবি ভাষায় অর্থ হচ্ছে, অতিরিক্ত গরম, কঠিন সূর্যতাপ, দহন, প্রজ্বলন, তৃষ্ণা এবং গলে যাওয়া। রমজান মাসে যেহেতু নেক-আমলের কারণে বিগত গুণাহ বা পাপগুলো বিমোচিত হয়ে যায় কিংবা গলে গলে নিঃশেষ হয়ে যায়, সম্ভবত সে কারণেই এ মাসের নাম হলো রমজান। রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, সেখানে রোজাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমণ ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার-৫০৯৩)।

কিয়ামত দিবসে রোজা ব্যতীত অন্যান্য ইবাদতের সওয়াব বদলা হিসেবে অন্য কেউ নিয়ে নিতে পারবে, অর্থাৎ কোন বান্দা যদি দুনিয়াতে অপরের হক নষ্ট করে তার পুণ্যকর্মের সওয়াব ওই বান্দার আমল নামায় যোগ হবে, যার হক নষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু এক্ষেত্রে রোজা ব্যতিক্রম। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘আমিই এর প্রতিদান বা বদলা হবো। সব ইবাদতের পরিবর্তে বেহেশত লাভ হয়। রোজার পরিবর্তে বেহেশতের স্রষ্টা আল্লাহকেই পাওয়া যাবে।’

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘রোজাদারের যে পুরস্কার, এটা আমি নিজে দেই এবং এটা আমি কোনোরকম অনুপাত বা হিসাব ছাড়াই দিয়ে থাকি।’

Leave a Comment