বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক। ফেসবুক এমন এক যোগাযোগের মাধ্যম যেখানে প্রায় সব বয়সী মানুষের আনাগোনাই রয়েছে। আর বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
তবে আজকাল এই ফেসবুকেই অনেকেরই ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন কেউ আছেন যারা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কর্মকাণ্ডের খতিয়ান দেন এই ফেসবুকে। অথচ আমরা এটাই ভুলে যাই যে, এটা শুধুমাত্র একটা যোগাযোগের মাধ্যম। এখানে ব্যক্তিগত সব কথা জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আজকের এই আয়োজনে চট করে একবার চোখ বুলিয়ে নিন এবং জেনে নিন ফেসবুক ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদবকেতা সম্পর্কে :
• যদি কেউ আপনার পোস্ট করা ছবি বা স্ট্যাটাস নিজের ওয়াল থেকে মুছে দেয়, তবে কোনো দরকার নেই সেটিকে আবার রিপোস্ট করার। হতে পারে সে আপনার পোস্টের কারণে বিরক্ত। তাই কেউ নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে তাকে আর পোস্ট বা ট্যাগ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
https://www.selfhealinghub.com/%e0%a6%86%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%87%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%be-%e0%a6%a6/
• অনেকেই আছেন, যারা সঙ্গীর সাথে একটু রাগারাগি বা কথা কাটাকাটি হলেই তা প্রকাশ করতে ফেসবুককে মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। অথচ আমরা অধিকাংশ সময়ই ভুলে যাই সম্পর্কের মধ্যে মনকষাকষি, ঝগড়া তো হবেই। আবার মিটেও যাবে। এটি ফলাও করে সবার কাছে বলার প্রয়োজন নেই। তাই এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকুন।
• ফেসবুক প্রোফাইল আপডেটের জন্য আমাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে থাকেন। তবে এখানে আপনার সুযোগ রয়েছে নিজের তথ্য গোপন করার। তাছাড়া এখানে এমন কোনো তথ্য দেবেন না, যা পরে অন্য কেউ আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করার সুযোগ পায়। মনে রাখবেন, যেকোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিজের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না দেওয়াই ভালো।
• ফেসবুকে আপনার বন্ধু বা পরিচিত কারো সম্পর্কে এমন কোন তথ্য দিবেন না, যার কারনে তাঁর চাকরির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হয়। হতে পারে আপনি নিছক উদ্দেশ্যেই কিছু একটা আপনার বন্ধুর ওয়ালে লিখে ফেললেন; যা কিছুক্ষণের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ল আপনার বন্ধুর সহকর্মীদের মধ্যে। এমনকি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও চলে যেতে পারে খবরটা। অতএব সাবধান। আপনার সামান্য ভুলের কারনে আরেকজনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
• প্রেম, বিয়ে অথবা নিজের সম্পর্কিত কোনো ধরনের নেতিবাচক কথা ফেসবুকে না লেখাই ভালো। কী দরকার শুধু শুধু নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় সবাইকে জানানোর?
• চেষ্টা করবেন সব সময় ফেসবুকে ইতিবাচক কথা বলার আর সৎ থাকার চেষ্টা করবেন। আপনি চাইলেই আপনার ফেসবুক বন্ধুদের ওয়ালে মনমতো কিছু লিখে তাঁর ক্ষতির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এখানে সততা না থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে। এক্ষেত্রে নিজে সৎ থাকুন, তাহলে অন্যরাও আপনার ক্ষতি করার সুযোগ পাবে না।
• অফিসের কাজের সময় ফেসবুক না ব্যবহার করাই ভালো। এতে করে যেমন কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়, তেমন ভাবে সহকর্মীরাও সুযোগ পেয়ে যায় আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করার। অনেক সময় ফেসবুক ব্যবহারের কারণে একটা সময়ে আপনি কর্মক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থাতে পড়তে পারেন।
• অনেকেই আছেন যারা ঘন ঘন সঙ্গী পাল্টান। আবার ফেসবুকে বারবার সম্পর্কের স্ট্যাটাস বদলে মানুষকে তা দেখিয়ে বাহবা পাওয়ারও চেষ্টা করে থাকেন। নিজেকে এতটা আধুনিক ভাবার কোনো কারণ নেই। এতে করে উল্টো আপনার প্রতি বাজে ধারণার সৃষ্টি হতে পারে।
• ভুল করেও নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অন্তরঙ্গ ছবি ফেইবুকে পোস্ট করবেন না। এতে করে আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ফেসবুকের সব বন্ধুকেই নিজের কাছের মানুষ ভাবা ঠিক নয়। তাই একটু সাবধানে থাকাই নিজের জন্য শ্রেয়।
• এমন কোনো পোস্ট ফেসবুকে করবেন না, যা আপনার বন্ধুর ও বন্ধুত্বের সম্পর্কে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার বন্ধু আপনাকে বিশ্বাস করে বলেই আপনার সাথে অনেক তথ্য শেয়ার করে। তাঁর মানে এই নয় যে বন্ধুর সঙ্গে একটু ঝামেলা হলো আর তার সব অজানা কথা ফেসবুকে লিখে দিলেন। এটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না।
• সম্পর্ক ভাঙলে ফেসবুকে পরস্পরের প্রতি কাদা ছুড়বেন না। নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙন ফেসবুকে আপডেট করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
• অনেকেরই ধারনা যত বেশি ফেসবুক বন্ধু, তত বেশি অনলাইনজগতে জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব। তাই কেউ বন্ধুত্বের আবেদন করার সাথে সাথেই তাকে ফেসবুক বন্ধু বানিয়ে ফেলেন। অথচ না জেনে অপরিচিত কাউকেই ফেসবুক বন্ধু না বানানোটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
• সব পোস্টেই যে আপনার কমেন্ট করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিছু কিছু পোস্ট প্রয়োজন মনে হলে এড়িয়ে যাওয়াই উচিৎ।
• ফেসবুক ব্যবহারে আরো একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি তা হলো- অযথা তর্কে জড়াবেন না। মনে রাখবেন ফেসবুক তর্ক করার মঞ্চ নয়। তর্কে জড়ালে আপনার সময় নষ্ট হবে। তর্কে জড়িয়ে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং ফেসবুকে তর্ক এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই সব মন্তব্যের উত্তর দিতে যাবেন না। বা সব সময় নিজের মতকে সঠিক প্রমাণের চেষ্টা করারও দরকার নেই।
• কেউ যদি ফেসবুকের কোন লেখায় কাউকে প্রশ্ন করে তাহলে সেটার উত্তর দেওয়া উচিত। এটাও এক ধরনের ভদ্রতা। এমনকি লেখাটা যদি একান্ত আপনাকে নিয়েই হয়ে থাকে তাহলে তো অবশ্যই আপনার সেই লেখার নিচে কমেন্ট দেওয়া উচিত।