অফিসে কাজের ফাঁকতালে উদাস করা অনুভূতিটা কিছুতেই ছাড়ছিল না সাবিহাকে। উঠতে-বসতে, লাঞ্চ-বিরতিতে এমনকি সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করার ফাঁকেও যেন ফিরে ফিরে আসে উদাস করা সেই অনুভূতি। মানসিক চাপ। পোশাকি নামে স্ট্রেস। কর্টিসল, এপিনেফ্রেনাইন, অ্যাড্রিনালিন ধরনের কিছু স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে নানা বিপত্তি ঘটে যায়। অবসাদ, উদ্বেগ, অনিদ্রা, হতাশায় আক্রান্ত হন মানুষ। মস্তিস্ক রসায়নে এবার চাই পরিবর্তন।যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা অপরিসীম।
কথায় বলে- সুস্থ দেহ সুন্দর মন। কথাটা সর্বাংশেই সত্য। দৈহিক সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই। একটা নীরোগ সুস্থ-সুঠাম সতেজ কর্মঠ দেহের সঙ্গে মানসিক ভ্রান্তিহীন মনের বন্ধন ঘটলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবনের নিশ্চয়তা মেলে।
দৈহিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম। কিন্তু পরিশ্রম পরিকল্পিত না হলে দৈহিক সৌন্দর্য ও সুস্থতা নিশ্চিত হয় না। দেহের জন্য দরকার হয়ে পড়ে পরিকল্পিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের। আমাদের এ নাগরিক সভ্যতায় মাঠ-ঘাট-খোলা জায়গা এখন যেভাবে ধীরে ধীরে কল্পজগতের বস্তু হয়ে উঠছে তাতে করে শরীরচর্চার পরিসর ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। পরিমিত সঞ্চালন ও সক্রিয়তা রক্ষার অনন্য মাধ্যম হিসেবে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম এখানে তুলনাহীন। যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসন চর্চার জন্য আপনার ঘরের স্বল্প পরিসর মেঝে বা আপনার বিছানাটাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
ইয়োগা অর্থ হচ্ছে শরীর ও মনের যোগ। এই যোগটা সম্পন্ন হয় নিঃশ্বাসের মাধ্যমে। মানুষ নিঃশ্বাস নিতে নিতে প্রাণায়ামের মধ্য দিয়েই নানা আসন করে। সাধারণ যেসব পদ্ধতি আছে সেগুলো যে কোনো জায়গাতে বসেই করা যায়। কর্মক্ষেত্রে নিজের জায়গাতে বসেও চটপট করে ফেলতে পারবেন। দেখবেন মানসিকভাবে অনেকটাই হালকা বোধ করছেন। দিনে একবার করা গেলেও উপকার পাবেন। মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে বের হয়ে আসার জন্য ইয়োগা সব থেকেই বেশি কার্যকর। মানসিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, চঞ্চলতা, অস্থিরতা কমিয়ে আনা ও স্মৃতিশক্তি ভালো করার জন্যও ইয়োগা ভালো।
জীবনযাপনের চলমান বাস্তবতায় উদ্ভূত স্ট্রেস বা মনোদৈহিক চাপের মধ্য দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করতে হয় আমাদের, তা থেকে পরিত্রাণের যে ছটফটানি, এটা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রতিনিয়ত প্রভাব ফেলে যাচ্ছে। সেই অসহনীয় চাপ সফলভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে স্নায়ুরোগসহ মনোদৈহিক সমস্যার বিস্তার ঘটে। এই মনোদৈহিক সমস্যা উত্তরণে আমাদেরকে ইয়োগার আশ্রয়ই নিতে হবে।
প্রতিদিন জীবনযাপনে আমরা যদি নিজেদের আবেগকে সঠিক পথে চালিত করতে পারি, তবেই জীবনবোধকে অনেক সহজ মনে হবে। যোগাসন শরীর ও মনকে সঠিক নিয়ন্ত্রণে বজায় রাখে। ফলে দৃষ্টিভঙ্গিও অনেক পরিণত হয়ে ওঠে।
যোগাসনের উপকারিতা
শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময় সাধারণত ফুসফুস মাত্র দু’তিন ভাগ প্রসারিত হয়। কিন্তু নিয়মিত যোগাসন করলে ফুসফুস প্রায় ১০০ ভাগ প্রসারিত হয়। এতে শরীরে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে।
যোগাসনের ফলে নার্ভাস সিস্টেম ও সার্কুলেটরি সিস্টেমের কর্মক্ষমতাও অনেকখানি বেড়ে যায়। ফলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের কার্যকর ক্ষমতাও বাড়ে।
স্ট্রেস কাটাতে যোগাসনের বিকল্প নেই। স্ট্রেস থেকে নিস্তার পেতে জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। যোগাসন এমনই একক মন্ত্র, যা জীবনকে নতুনভাবে চিনতে শেখায়।
যোগাসন এনার্জি লেভেল বাড়াতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। যাদের এক জায়গায় বসে কাজ করতে হয় তারা খুব অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাই অফিসে আসার আগে যোগাসন করলে মুড ভালো থাকবে। অথবা মুড খারাপ থাকলে বাড়ি ফিরে যোগাসন করুন। দেখবেন মুড ভালো হয়ে গেছে।
ডিপ্রেসন ভুগলে যোগাসন করুন। যোগাসনের ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে নতুন উদ্যম জোগাবে।
যেভাবে শুরু করবেন
যোগাসন শুরু করার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। পাঁচ বছর বয়স থেকেই যোগাসন শুরু করা যায়। টিভিতে, বইয়ে নানা রকম যোগাসন দেখে ভয় পাবেন না। অনেক সময় নানা ধরনের যোগাসন দেখলে মনে হয়, কোনটা করা ঠিক হবে আর কোনটা নয়। কনফিউশন হলে প্রথমে কোনো এক্সপার্টের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন। যোগাসন শুরু করার সময় প্রথমেই খুব বেশি শক্ত বা কঠিন আসন করার দরকার নেই। কিছু বেসিক আসন দিয়ে শুরু করুন।