আকুপ্রেসার হল ব্যথা উপশমের বিকল্প চিকিৎসা। দিনে ও রাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা যেতে পারে। এটি সমস্যার সমাধান করবে। ব্যথা উপশম হবে।
সারা শরীরে ব্যথা আমাদের সমাজে এখন প্রধান অসুখ; কারও কোমর ব্যথা, কারও হাঁটু বা ঘাড়ের ব্যথা, কারও গোড়ালি ব্যথা, কোমর ব্যথা, কারও মাংসপেশির ব্যথা। এর সাথে একটি সাধারণ ব্যথা হল মাথাব্যথা। ব্যথা কমানোর জন্য ভূরি ভূরি ব্যথা উপশমকারী ওষুধ গ্রহণ করা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের ড্রেসিং প্রয়োগ করতে বিভিন্ন নামের মলম ব্যবহার করা হয়। যতক্ষণ ওষুধ কাজ করে, ততক্ষণ ভালো। কিন্তু সেটা কমে গেলে ব্যথা আবার ফিরে আসে। মানুষ অধৈর্য হয়ে ওঠে এবং ব্যথা বেড়ে যায়। নানা ধরনের ব্যায়াম করার চেষ্টায়ও কমতি থাকে না। কিন্তু ব্যথা থেকেই যায়।
প্রচলিত ব্যথার চিকিৎসার পাশাপাশি, বিকল্প চিকিৎসা যেমন আকুপ্রেসার ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই সম্পর্কে ভাল জিনিস আপনি ব্যথা উপশম এর জন্য নিজেই আকুপ্রেসার করতে পারেন. শুধু হাত দিয়ে নিজেই আকুপ্রেসার করে অনেক জটিল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব!
কোমরব্যথার ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে
আমরা সাধারণত মচকে যাওয়া বা আংশিকভাবে ছেঁড়া লিগামেন্ট, ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক সমস্যা, ডিস্ক স্থানচ্যুতির কারণে পিঠে ব্যথা দেখি। হাঁটা, খুব ভারী ওজন তোলা, মেরুদন্ডের অত্যধিক নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করা, কম্পিউটার ও সেল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার, মেরুদন্ডে আঘাত, বিশেষ করে কোমরের অবস্থানের ত্রুটির কারণে এই ব্যথা হয়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে বয়সজনিত মেরুদণ্ডের ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরেসিস, এনকাইলজিং স্পন্ডেইলাইটিস, মেরুদণ্ডের স্নায়বিক সমস্যা, টিউমার, ক্যানসার, বোন টিবি, কোমরের মাংসে সমস্যা, বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদণ্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন প্রভৃতি।
কোমরব্যথার উপসর্গ
কোমরের ব্যথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। নড়াচড়া বা কার্যকলাপের সাথে ব্যথা আরও খারাপ হতে পারে। ব্যথা কোমরে হতে পারে বা কোমর থেকে পায়ে বিকিরণ করতে পারে বা পা থেকে কোমরে উঠতে পারে। কখনও কখনও পিঠে ব্যথা মেরুদণ্ডের পিছনে মাথা পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। রোগী বেশিক্ষণ বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। ব্যথার পায়ে শিন-শিন বা ঝিন-ঝিন জাতীয় ব্যথা নিচের দিকে যেতে পারে বা ওপরে যেতে পারে, হাঁটার সময় পা শক্ত হয়ে যেতে পারে বা কোমর জমে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা উভয় পায়ে নেমে যেতে পারে। কখনও কখনও বিছানায় শুয়ে ব্যথা উপশম করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের পেশী দুর্বল ও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত রোগী চলাফেরার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মুক্তি দিতে পারে আকুপ্রেসার
আকুপ্রেসার হচ্ছে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবহমান জৈব বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত একটি চিকিৎসাপদ্ধতি; রোগী নিজেই নিজের চিকিৎসা করতে পারবেন শুধু নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে চাপ দিলেই ঠিক নির্দিষ্ট স্থানের ব্যথা কমে আসে। এখনো এটা নিয়ে বিস্তর ট্রায়াল হয়নি, তবে নানা উপায়ে স্বীকার করা হচ্ছে, আকুপ্রেসার কার্যকর একটি চিকিৎসাপদ্ধতি বিশেষ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত পেইন ম্যানেজমেন্ট থেরাপি। উন্নত বিশ্বে এখন বিভিন্ন থেরাপি সেন্টারে আকুপ্রেসার স্থান করে নিয়েছে।
আকুপ্রেসার আপনাকে মুক্ত করতে পারে।
আকুপ্রেসার হচ্ছে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবহমান জৈব বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত একটি চিকিৎসাপদ্ধতি; রোগী নিজেই নিজের চিকিৎসা করতে পারবেন শুধু নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে চাপ দিলেই ঠিক নির্দিষ্ট স্থানের ব্যথা কমে আসে। এটি এখনও ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হয়নি, তবে আকুপ্রেসার একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে বিভিন্ন উপায়ে স্বীকৃত, বিশেষত কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই একটি ব্যথা ব্যবস্থাপনা থেরাপি হিসাবে। আকুপ্রেসার এখন উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন থেরাপিউটিক সেন্টারে স্থান পেয়েছে।
আপনার শরীরে যে ব্যথাই থাকুক, দুহাতের তালুতে দুই মিনিট ঘষতে হবে যাতে করে হাতের তালু দুটো গরম হয়ে যায়, তারপর গরম হাত দুটো এক হাত অন্য হাতে চাপ দিতে হবে, এতে সময় নেবেন তিন মিনিট। এবার কোমরের ব্যথার জন্য তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গারের উপরিভাগে কবজি থেকে আঙুলের নখ পর্যন্ত আস্তে আস্তে করে চাপ দিতে হবে, বিশেষ করে থাম্ব বা বুড়ো আঙুল আর তর্জনী যেখানটা মিলেছে সেটায় চাপ দিলে ব্যথা অনুভব হবে, যেখানে ব্যথা হবে সেখানে নিয়মিত ১০০ বার চাপ দিতে হবে। একটি চাপের সঙ্গে আরেকটি চাপের মধ্যে দুই সেকেন্ড বিরতি দিয়ে চাপ দিতে হবে। ঠিক ছবিতে দেওয়া চিহ্নে চাপ দিতে হবে। দুই হাতে একই নিয়মে আকুপ্রেসার করতে হবে, সারা দিনে দুবার খালি পেটে নিয়মিত আকুপ্রেসার করলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
যাদের হাঁটুতে ব্যথা আছে তারা কোমরের পয়েন্ট ছাড়াও কড়ে আঙুলের নখের সাইড থেকে কবজির হাড় পর্যন্ত পাশ দিয়ে বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ব্যথা পাওয়া যাবে, যা হাঁটুর পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়, বিশেষ করে কবজির উপরিভাগে এবং ঠিক কড়ে আঙুলের শুরু হয়েছে, এমন স্থানে চাপ দিলে কাঁধে ব্যথা আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। ঠিক এই সাইডে ওপর থেকে নিচে প্রতিটি স্থানে চাপ দিয়ে নামতে হবে, এভাবে ১০০ বার করে দুই হাতে চাপ দিলে হাঁটু, হাতের কনুই ও কাঁধের ব্যথা কমে আসবে। এটাও দুই হাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোয়ার আগে নিয়মিত আকুপ্রেসার করতে হবে।
আকুপ্রেসার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
যেহেতু আক্রান্ত হাতও আপনার, মুক্তির হাতটিও আপনার, তাই সারা দিন হাতটি চাপা যাবে না। সবচেয়ে ভালো সময় হল নিয়মিত ডোজ সকালে খালি পেটে এবং সন্ধ্যায় শোবার আগে। অফিসে ঘোরাঘুরির সময় গাড়িতে বসে আকুপ্রেসার করা যেতে পারে। দিনে দুবেলার বেশি নয় এবং সপ্তাহে ছয় দিন একদিন ছুটি নিয়ে আকুপ্রেসার করুন, আপনি আরও সুবিধা পাবেন। নিয়মিত আকুপ্রেশার হাত কাঁপানো, পক্ষাঘাত এবং স্নায়ুর সমস্যার জন্য খুবই উপকারে আসে।
প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যথা কমানোর জন্য আদাজল উত্তম ।
এক টেবিল চামচ আদার রস দিনে দুইবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। চা হিসেবে আদার রস পান করলে ব্যথা উপশম হয় এবং হজমের সমস্যায়ও সাহায্য করে।
এই আধুনিক যুগেও ব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
সতর্কতা:
1) আকুপ্রেশার খাওয়ার পরে বা ভরা পেটে করা উচিত নয়।
2) আকুপ্রেসার দিনে দুবারের বেশি করা উচিত নয়।
3) গর্ভবতী মহিলাদের আকুপ্রেসার একেবারেই করা উচিত নয়।
4) একটি নির্দিষ্ট “চাপ বিন্দুতে” একটানা 2 মিনিটের বেশি আকুপ্রশার করা উচিত নয়।
5) আকুপ্রশার কখনোই একটানা প্রতিদিন 20 মিনিটের বেশি করা উচিত নয়।
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং আকুপ্রেসা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে, আপনি একাধিক শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারেন। একাধিক জটিল সমস্যা, বিশেষ করে পেশী ও স্নায়ুর সমাধানে আকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ কার্যকর।