স্মৃতি একজন ব্যক্তির সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। মানুষ এই শক্তি ছাড়া জড় পদার্থের মত। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি লোপ বেশি হয়। কিন্তু এখন আমরা জানি যে এটি কম বয়সী ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করে। কেউ কেউ বলে, “আমি অনেক পড়েছি, কিন্তু কিছুই মনে নেই” এবং অনেকে বলে, “আমার বুদ্ধি কম, তাই পরীক্ষায় ভালো করতে পারিনি।” কারণ তারা মনে রাখতে পারে না। এটি একটি খুব গুরুতর বিষয়। এবং কিভাবে এটি ঠিক করা যায় তাআমরা বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু অল্পবয়সেও এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় বা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর যায় । এটা করার অনেক উপায় আছে।
হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের একটি অংশ যা স্মৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ব্যায়াম শরীরের জন্য ভালো এবং মস্তিষ্ককে জিনিস মনে রাখতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরি করে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন তখন হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত এবং স্ফীত হয়, যা আপনাকে জিনিসগুলি মনে রাখতে সাহায্য করে। আবার, নিয়মিত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম মস্তিষ্ককে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ দেয়, যা এটিকে আরও ভালভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। আপনি যদি জিনিসগুলি আরও ভালভাবে মনে রাখতে চান তবে প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে থাকুন।
আপনার মনকে ভালোভাবে কাজ করতে সঠিক খাবার খান
মস্তিষ্কের শক্তি বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে, সঠিক খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, আমরা সারা দিনে যা খাই তার মাত্র ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। তাই মস্তিষ্ক কতটা ভালো কাজ করে তার জন্য গ্লুকোজের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই স্তরটি যথেষ্ট উচ্চ না হয় তবে এটি বেশ কয়েকটি সমস্যার কারণ হতে পারে। সুতরাং, যদি আপনি আপনার মস্তিষ্ক আরও ভালভাবে কাজ করতে চান তবে নিয়মিত এবং ভাল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে –
কলা: কলা ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-তে পরিপূর্ণ, যা স্নায়ুর ইমপালস্ ট্রান্সমিশনে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
মাছের মাথা এবং তেল
এটি সত্য যে মাছ এবং মাছের মাথা আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভাল, কথাটি বলেএকেবারে ঠিক। কারণ মাছের তেল মস্তিষ্কের নতুন কোষ তৈরি করে, মস্তিষ্কে প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। এছাড়াও, মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
কলিজা
আয়রন এবং ভিটামিন বি, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো ও মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়, যা মাংসের কলিজা পাওয়া যায়। এছাড়াও, পালং শাক, বিভিন্ন ফল, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, তৈলবীজ, মটরশুটি এবং অন্যান্য খাবার মস্তিষ্কের জন্য ভালো।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম
আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। প্রতি রাতে, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং তাড়াতাড়ি উঠুন। কারণ ঘুম মস্তিষ্ককে স্থিতিশীল ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। নিয়ম মেনে প্রতি রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমান।
মেডিটেশন করুন
স্মরণশক্তি বাড়ানোর আর এক উপায় হল মেডিটেশন। এ কারণে আমরা কম চিন্তা করি এবং কম চাপ অনুভব করি। আর এই মেডিটেশন করলে ফোকাস করা সহজ হয় এবং মস্তিষ্ক যে কোনো কাজে ভালোভাবে কাজ করে। তাই মনে রাখতে বা মনে করার কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। প্রতিদিন, ঘুম থেকে ওঠার আগে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন করুন। আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার মন শান্ত করার চেষ্টা করার জন্য গভীর শ্বাস নিন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি এর সুফল পেতে পারেন।
মানসিক চাপ কমিয়ে দিন
স্মৃতিশক্তি নষ্টের বড় কারণ হলো মানসিক স্ট্রেস। স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে আঘাত করে যেভাবে এটি স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিতে আঘাত করে। সুতরাং, চেষ্টা করুন এর থেকে দূরে থাকতে। বই পড়ুন, গান শুনুন বা অন্য কিছু করুন যা আপনার মনকে এর থেকে দূরে রাখে এবং নিজের ভালো লাগা কিছু কাজ করুন যা আপনার ভালো লাগে। চুপচাপ বসে থাকুন, চোখ বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা যখন আপনি চাপ অনুভব করছেন তখন গভীর শ্বাস নিন। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।