দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা। এক দশক আগেও ৮ থেকে ১০ বছরের শিশুদের এমন অবস্থা দেখা না গেলেও বর্তমানে স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে বড়দের সঙ্গে শিশুরও এ সমস্যায় ভুগছেন বেশি। ফলে দৃষ্টিশক্তির ওপর মারাত্মক আঘাত হানছে; দৃষ্টিশক্তির কমবেশি সমস্যা ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় করণীয় কী? দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখার কিছু প্রাকৃতিক কৌশল আছে, তার মধ্যে আকুপ্রেশার অত্যন্ত কার্যকর।
প্রায় দেড় বছর ধরে ঘরে বসে আছে শিশুরা। অনবরত স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা কোনো দূরের বস্তু লক্ষ্য করেনি। ফলে তাদের দূরের দৃষ্টিশক্তি সঠিকভাবে গড়ে উঠছে না। দৃষ্টি রাতারাতি তৈরি হয় না। ৮ বছর বয়সে শিশুদের চোখের গঠনগত পরিবর্তন হতে শুরু করে। ফলে এ বয়সের শিশুরা দূরের জিনিস না দেখতে দেখতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলছে এবং দূরের বস্তু দেখতে অক্ষম হচ্ছে। তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে না।
৬ থেকে ৮ বছর বয়সের মধ্যে চোখের গোলা খুব বড় হলে দূরে দেখার ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়। কাছের বস্তুর দিকে তাকালে বা কোনো কিছুতে ফোকাস করার সময় চোখের গোলাগুলো বড় হয়। করোনার যুগে শিশুদের চোখে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। এর ফলে রেটিনার সমস্যা হতে পারে। এমন কি যেকোনো বয়সেই অন্ধত্ব হতে পারে।
সমীক্ষা অনুসারে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই কেবল দৃষ্টি সমস্যায় ভুগবে। মায়োপিয়া হল এই চোখের অবস্থার জন্য চিকিৎসা শব্দ। উন্নত দেশগুলোতে গত এক দশকে এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। কোভিডের সময়, মায়োপিয়ার মতো সমস্যাগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি শিশুদের চোখে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ডাক্তাররা একে কোয়ারেন্টাইন মায়োপিয়া বলে।
চীনে, ১২০,০০০ শিশুর পরীক্ষা করা হয়েছে। যখন ছাত্রদের চোখ পরীক্ষা করা হয়, তখন এটি আবিষ্কৃত হয় যে ছয় থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এই বয়সের শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া বেড়ে দরিয়েছে তিনগুণে।
মায়োপিয়া এবং শিক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যাদের পড়াশোনা উচ্চ স্তর রয়েছে তাদের মায়োপিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। মায়োপিয়া এড়াতে, যে কোনও কাজ করার সময় মাঝেমধ্যেই একটু দূরের দিকে তাকানো। এটা সময় এবং প্রচেষ্টা লাগেনা সুধু অভ্যাস করে ফেলতে হবে! এমনকি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে নিবিড়ভাবে কাজ করার সময়, আপনাকে অবশ্যই মাঝে মাঝে দূরে তাকাতে হবে। সূর্যের আলোও খুব জরুরি। দিনের বেলা বাইরে সময় কাটানো প্রয়োজন। সূসূর্যের আলো আইবলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অন্ধকারে, মায়োপিয়া বেড়ে যায় । আলো থাকলে মায়োপিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে আকুপ্রেসার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আকুপ্রেশার কৌশল বা কীভাবে আমরা আকুপ্রেশার করবো
শিশুরা নিজে থেকে আকুপ্রেশার করতে না পারলেও বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের চোখে আকুপ্রেসার প্রয়োগ করা। চোখের আকুপ্রেশারের শুরুতে চোখের চারপাশের যে অংশে হাড় আছে সেখানে হাড়ের চারপাশের বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। দুই মিনিট ঘড়ির কাঁটার দিকে, তারপর দুই মিনিট ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে।
- তারপরে আমাদের অবশ্যই উভয় হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মস্তিষ্কের বিন্দুতে ২০০ বার আকুপ্রেশার প্রয়োগ করতে হবে, যাতে চাপটি খুব শক্তিশালী বা খুব ধীর না হয় তা নিশ্চিত করে করতে হবে । ধীরে ধীরে দুই হাত দিয়ে আকুপ্রেশার করতে থাকুন।
- স্ক্রিনের দিকে তাকানোর ফলে কেবল মায়োপিয়া হয় না, তবে এটি শিশুদের চোখের জল শুকিয়ে ফেলে দেয়, এটি শুষ্ক চোখ নামে পরিচিত। স্ক্রিন চোখ ক্লান্ত করে দেয় । দীর্ঘ সময় ধরে স্মার্টফোনের নীল আলোর দিকে তাকানোও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এর জন্য এই আকুপ্রেসার অনেক টা আরাম দেবে।
- চোখের মূল বিন্দুতে চাপ দিলে অনেকেই ব্যথা অনুভব করবেন, যা দুই আঙুলের মধ্যবর্তী ও তর্জনীর ভেতরের দিকের বিন্দু। এই পয়েন্টগুলিতে উভয় হাতের উভয় আঙ্গুলে নিয়মিত ৪০০ বার টিপুন।
- আপনার যদি সাইনাসের সমস্যা থাকে তবে প্রতিটি আঙুলের ডগায় এভাবে আকুপ্রেসার করুন; এটি সাইনাস কমাতে এবং আপনার দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- যদিও নীল আলো ঘুমে মারাত্মক ভাবে ব্যাঘাত ঘটায়, অনেক স্মার্টফোনে নীল আলো কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নাইট মোড উপলব্ধ। তবে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ রাখতে হবে। এই সময় কোনো পর্দার দিকে না তাকানোই ভালো।
চোখের জন্য উপকারী খাবার খেতে হবে। এবং কাঁচা সবজি সালাদ নিয়মিত খাওয়া উচিত। গাজর, বীট, টমেটো, ক্যাপসিকাম, শসা এবং মিষ্টি কুমড়া, সেইসাথে পালংশাক, কলমি শাক, এবং ছোট মাছ বিশেষভাবে উপকারী।
শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস দেওয়া নিষিদ্ধ করা উচিত। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত যেকোনো স্ক্রিন শিশুদের চোখের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর। ৪থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের পর্দার দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন ৩০ মিনিটের বেশি সময় কাটানো উচিত নয়। সেই হিসাব অবশ্য সম্পূর্ণ বদলে গেছে, বিশেষ করে করোনার সময়কালে। অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সময়, বাচ্চাদের অবশ্যই একটি স্ক্রিনের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল । এটি থেকে পরিত্রাণের একটিই সুযোগ রয়েছে। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যান। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকান। এবং নিয়মিত আকুপ্রেসার করতে থাকুন।