বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০,০০০ লোক শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলবে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল শ্রবণশক্তি হ্রাস বা শব্দ শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। এটি এমন একটি সমস্যা যা কেবল বয়স্কদেরই নয়, অল্প বয়সের তরুণ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করতে পারে। কানে কম শোনাকে বলা হয় শ্রুতিক্ষীণতা বা বধিরতা। কানে কম শোনাকে বা শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় জেমনঃ- হালকা, মাঝারি এবং গুরুতর। যাইহোক, খুব কম শোনাকে বধিরতা বলা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০,০০০ লোক শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলবে।
কানে কম শোনার কারণ কী
শ্রবণতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সমস্যায় শ্রবণশক্তি কমে। কানের খৈল বা ওয়াক্স, বাহির থেকে কিছু কানের ভেতর প্রবেশ, ফোড়া বা টিউমার, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস সংক্রমণ (হাম, রুবেলা, মাম্পস, চিকেন পক্স প্রভৃতি), কানের স্নায়ুর সমস্যা, মধ্যকর্ণে প্রদাহ, অন্তঃকর্ণে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটা কিংবা নাক ও মধ্যকর্ণের সংযোগকারী নালির কোনো সমস্যায় শ্রবণশক্তি কমতে পারে। এ ছাড়াও জেনেটিক্স, গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ সেবন, কানে ইনফেকশন, মাথায় ও কানে আওয়াজ হওয়া এবং খুব জোরে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করার কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস হতে পারে।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেও শ্রবণশক্তি কমতে পারে, বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি থাকলে শ্রবণশক্তি কমতে পারে ।
ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা
ডাক্তার যদি কোনো কারণে কানের ড্রপ দিয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো ভালোভাবে না বুঝে কানের কোনো সমস্যার জন্য ব্যবহার করা ঠিক নয়। এমনকি একজন ওষুধের দোকানদার কোন কিছু না বুঝে কানের ড্রপগুলির দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। তারা সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত মনে রাখবেন কানের অন্তর্নিহিত কারণ না জেনে ড্রপ ব্যবহার করলে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে বারবার ব্যবহার করলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।
সমস্যায় পড়লে ঘরোয়া উপায়ে কী করবেন
- ঠান্ডা বা কাঁচা খাবার কানের ইউস্টাচিয়ান টিউবের ক্ষতি করতে পারে। ফলস্বরূপ, কানের মধ্যে নিষ্কাশন প্রক্রিয়া ধীর বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হতে পারে। শ্রবণশক্তি হ্রাস এড়াতে, এই জাতীয় খাবার খাওয়া এড়িয়ছলত চলতে হবে।
- প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর কানের ভিতরে শ্লেষ্মা তৈরি হতে শুরু করে। শ্রবণশক্তি হ্রাস এড়াতে চাইলে এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো।
- একটি মেশিন কারখানায় দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করার ফলে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কানে ইয়ারপ্লাগ এর মাধ্যমে গান শোনা, কানের ইয়ারপ্লাগ যতই ভালো ব্র্যান্ডের বা দামী হোক না কেন, কানের শ্রবণশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- বাড়িতে শ্রবণশক্তি বজায় রাখতে নিয়মিত ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি 12 সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী। আপনি দুধ, পনির, ডিম, টফু এবং অন্যান্য খাবার খেতে পারেন।
এ ছাড়াও আকুপ্রেসারে কানে সমস্যা দূর করার উপায়
আমাদের শ্রবণ যন্ত্র ও পঞ্চ ইন্দিয়ের একটি হচ্ছে কান। এই কান দিয়েই বাইরের শব্দ ভিতরের কর্ণপটে গিয়ে পৌছায়। সংবাদ বা সংকেত সংগ্রহ করে তা কানের ভিতর নিয়ে যায় এবং কম্পন সৃষ্টি করে শব্দের প্রখরতা বৃদ্ধি করে। স্নায়ুর চাপে এর কার্যক্রমে সহযোগীতা আবার ব্যঘাতও সৃষ্টি করে থাকে।
সমস্যা ঃ কানে কম শোনা, দূরের শব্দ না পাওয়া, কাছের শব্দ সঠিকভাবে না শোনা, কানে সর্বক্ষন শব্দ হওয়া, কানে ব্যথা এবং কানে পুঁজ হওয়া চেনা সমস্যা, এছাড়াও কানে এক দমই শোনে না শ্রবণ শক্তি নাই।
আকুপ্রেসার ঃ শ্রবণ শক্তির যে কোন দুর্বলতা কিংবা স্নায়ু জনিত কারণে কানের সমস্যা হলে দুহাতে পয়েন্টে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ৪০০ করে চাপ দিতে হবে, সেই সাথে কানে চিকিৎসার জন্য ঠান্ডার পয়েন্টগুলোও আকুপ্রেসার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত আকুপ্রেসার করলে কানের অনেক কঠিন সমস্যাও মাসক্ষানিকের মধ্যে সেরে যায়।
সর্তকতা ঃ কানে ব্যথা থাকলে আগে ব্যথা সেড়ে নিতে হবে।
রোগ অনুযায়ী খাদ্য ঃ কানের সমস্যার জন্য অন্যতম দায়ী ঠান্ডা লাগা, তাই ঠান্ডা লাগা থেকে সাবধান থাকা আর ঠান্ডা লেগে গেলে, তুলসী, আদা, বাসক এর রস খেলে কানের সমস্যা দূরে থাকবে। খাদ্য তালিকায় কাচা পেঁয়াজ ও রসুন কানের জন্যও উপকারী।