মাথাব্যথা! এটা কি সাধারণ মাথাব্যথা না’ মাইগ্রেইন

সেটা কি করে বুঝবেন?

মাথাব্যথা ব্যাস্ততাময় জীবনে একটি প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ আমরা সবাই মাথাব্যথার যন্ত্রণায় কম-বেশি ভুক্তভোগী। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একে সামান্য মনে করে কাষ্টটুকু সহ্য করা হয়। খুব বেশি অসহ্য কষ্টদায়ক হলে কেউ হয়ত ওষুধ সেবন করেন।

কিন্তু কখনো এ ব্যথা যদি মাইগ্রেইন হয়?

তবে সেই চিন্তায় হয়ত অনেকেই আঁতকে ওঠেন এবং ভয় পেয়ে যান। মানসিক চাপ বা স্ট্রপস থেকে হওয়া সাধারণ মাথাব্যথা আর মাইগ্রেইনের মাথাব্যথার মধ্যকার তফাৎ’টা অনেক। মানসিক চাপ বা টেনশন থেকে মাথাব্যথা এই ধরনের মাথাব্যথা ঘাড় ও মাথায় পেছন দিকে শুরু হয়ে কপালের দুই পাশেই ছড়াতে থাকে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিবান চিকিৎসক ডা. পেম্যান সাদেগি’র প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, সাধারণ মাথাব্যথার কোনো নির্দিষ্ট কারণ বের করা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ মানুষিক চাপ থেকেই এর সুত্রপাত, কারণ হতে পারে ব্যক্তিগত কিংবা কর্মজীবনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, ঘুমের অভাব, স্ট্রেস ইত্যাদিসহ অসংখ্য বিষয়। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে এই মাথাব্যথা মৃদুমাত্রার হয়।

আর সেটা নিয়েও স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনকার কাজ করা যায়। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া’র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে চোখের উপর অতিরিক্ত ধকল বা চাপ এবং ক্ষুধা থেকেও এই মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা লম্বা সময় ধরে ভোগাতে পারে। আবার অন্যান্য চিকিৎসকদের মতে, পেশির অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক অস্বতি বা ব্যক্তিগত সমস্যা থেকেও মাথাব্যথা হয়। সাধারণ মাথাব্যথার অনুভূতি ডা. সাদেগি বলেন, এই ধরনের মাথাব্যথায় নারীরাই বেশি ভোগেন।

২’ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে সাধারণ মাথাব্যথাকে।

প্রথমত: এপিসোডিক-টেনশন টাইপ

যেটা কিনা আধা ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত ভোগাতে পারে। ব্যথার তীব্রতা কম এবং মাসে ১৫’ বারের কম হয়।

দ্বিতীয়ত: ক্রনিক টেনশন-টাইপ

যেখানে ব্যথার তীব্রতা অত্যন্ত বেশি এবং মাসে ১৫ বার তারও বেশি বার দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথার উপসর্গ বা লক্ষ্মণ গুলো একই ধরনের না হলেই তাকে মাইগ্রেইন ধরে নেওয়া’ও আবার উচিত হবে না। আরো এক ধরনের মাথাব্যথাও আছে যেটা কিনা ঠন্ডা জনিত ও সাইনাস’য়ের সংক্রমণ থেকে হয়। এ ধরনের মাথাব্যথার সঙ্গে নাক বন্ধ হওয়া, চেহারায় চাপ অনুভব করা, মাথাব্যথার তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এবং সেই ব্যথা আবার একপাশে হওয়া বা একপাশ থেকে আরেক পাশে চলে যাওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

মাইগ্রেইন কী?

স্নায়ু চিকিৎসকদের মতে মাইগ্রেইন হল স্নায়ুজনীত রোগ যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্নায়ুতন্ত্রের গতিপথ ও বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান। মাইগ্রেইনের ব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক মাইগ্রেইনের ব্যথা নিয়ে অনেক সময় কোনো কিছু করাই সম্ভব হয় না।

ফলে এই সমস্যায় আক্রান্তরা ব্যথায় এতোটাই কাতর থাকেন যে’ তাদের পক্ষে প্রতিদিনকার কাজ করা তো’ দূরের কথা কোন রকম বিনোদন মূলক কাজও তাদের ভালো লাগে না’। মাইগ্রেইনের ব্যথা নন-স্টপ চলতে থাকে এবং ব্যথাটা হয় তীব্র আলোর দিকে চোখ মেলে তাকানোটাও কষ্ট সাধ্য। অনেক সময় বমি-বমি ভাবও হয়ে থাকে। মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরু হওয়ার আগে ঘাড় ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ভার-ভার অনুভব, হতাশা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যায়।

মাইগ্রেইনের ব্যথায় কেমন অনুভূতি হয়?

ডা. সাদেগি মাইগ্রেইনের ব্যথাকে ৪’টি স্তরে ভাগ করেছেন

প্রথমত: প্রোডোম

দ্বিতীয়ত: অরা

তৃতীয়ত: হেডেক

এবং

চতুর্থত: রেজোল্যুশন

প্রোডোম স্তর: প্রোডোম স্তরের লক্ষন দেখা দিতে পারে মাইগ্রেইনের ব্যথা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগ থেকেই। প্রায় ৬০% মাইগ্রেইন রোগী’ই এ ভোগান্তির শিকার হয়। এ সময় খুব সহজেই মুড সুইং হয় এবং মেজাজ দ্রুত রূপ বদলায়, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, অতিরিক্ত মুত্রপাত, ঘাড় ব্যথা, পেট ফোলাভাব, বমি বমি ভাব, খেতে অরুচি, আলো ও শব্দের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীলতা ইত্যাদি উপসর্গ অনুভূত হয়।

অরা স্তর: এই স্তরে রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানী দেখতে পায় আলো একদমই সহ্য হয় না’ অস্বাভাবিক অনুভূতিহীনতা, চোখ জ্বালা ভাব দেখা দেয়। প্রায় ১৫% মাইগ্রেইন রোগী এই সমস্যা অনুভব করেন।

হেডেক স্তর:

হেডেক স্তরের শুরুটা হয় মাথার একপাশ থেকে এরপর এটি মাথার অন্যপাশেও সরে যেতে দেখা যায়। ব্যথা’টা হয় অনেকটা দপ-দপানির মতো। হাঁচি, কাশি বা ঠান্ডা হলে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় বহুগুন।

পাশাপাশি আরও থাকে ‘ফোনোফোবিয়া’, ‘ফটোফোবিয়া’, বমিভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, চিটচিটে ভাব ইত্যাদি উপসর্গ।

রেজোল্যুশন স্তর:

রেজোল্যুশন স্তরের লক্ষ্মণ হচ্ছে অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ, মুড সুইং ইত্যাদি। মাথাব্যথা সেরে যাওয়ার পরও এই সমস্যাগুলো রোগীর মধ্যে থেকেই যায়।

মাইগ্রেইনের ব্যথায় করণীয় কী?

ডা. সাদেগি বলেন,

সাধারণ মাথাব্যথা সারানো তেমন কঠিন কিছু নয়। সঠিক চিকিৎসায় এই ব্যথা খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস ব্যালেন্স করতে পারলে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে ওষুধ ছাড়াই এ ব্যথা ভালো হয়। আর পথ্য হিসেবে দেওয়া হয় মানসিক চাপ কমানোর ও ব্যথানাশক ওষুধ। তবে মাইগ্রেইনের চিকিৎসা পদ্ধতি একটু জটিল।

প্রথমত এই রোগ সারানোয় বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই যেতে হবে। রোগীর রোগের ধরন বুঝে চিকিৎসককে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে দিতে হয়। মাথাব্যথা আসলে রোগ নয়, এটা একটা উপসর্গ মাত্র। তাই উপসর্গ দূর করতে হলে, সেটা কিসের উপসর্গ সে বিষয়টি জানতে হবে এবং সেটাকেই চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে ফেলতে হবে।

আর সেই কারণটা হয়তো হতে পারে মাইগ্রেইন, সাইনাস কিংবা দৈনন্দিন জীবনের ধকল, টেনশন বা স্ট্রস। তাই ঘন-ঘন মাথাব্যথা হলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং এই মাথা ব্যথাকে সামান্য বলে কোন ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে না’।

আমাদের সকলের জীবন শারীরিক মানুষিক এবং আত্মিক প্রশান্তিতে প্রশান্তিময় হোক এই শুভ কামনা রইলো।

ধন্যবাদ

Leave a Comment