রমজান মাসকে  রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এ তিন ভাগে বিভক্ত করা কি ঠিক? 

রোজার মাস উপলক্ষে আমাদের দেশে বহু প্রতিষ্ঠান ক্যালেন্ডার ছাপার একটা রিতি প্রচলিত আছে। ক্যালেন্ডারে রমজানের ৩০ দিন কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমত। দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত। আর তৃতীয় ১০ দিন নাজাত।

রমজান মাস রহমত, তাওবা ও নাজাতের অন্যতম মাস। এটি সাধারণত আমাদের সবারই জানা। হযরত সালমান (ফার্সি) রা. প্রদত্ত একটি হাদিসে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমজান এমন একটি মাস যার শুরুতে রহমত, মাঝখানে ক্ষমা এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (১৮৮৭, ইবনে খুজাইমা)

রমজান মানেই রহমত। এই পদ্ধতিতে ভাগ করার অর্থ কী হতে পারে, যদি প্রশ্ন ওঠে?

অনেক ব্যক্তি মাগফিরাত ও নাজাতের মধ্যে রহমতের পার্থক্য বুঝতে পারে না যেমন তিরমিযী হাদিসে বলা হয়েছে, “রমজানের প্রতি রাতে অনেক লোক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।”

হাদীসের সত্যতা কতিপয় হাদীস বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়। এই হাদিসের সনদে আলী ইবনে যায়েদ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন।

তার সম্পর্কে বেশ কিছু মুহাদ্দিসের অভিমত – তার স্মরণ শক্তি ছিল দুর্বল, তিনি বর্ণনা করতে গিয়ে অসংখ্যবার ভুল করেছেন। তাই তাঁর কাছ থেকে প্রেরিত হাদীস না বুঝলে তা গ্রহণ করা উচিত নয়।

একজন বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে রাসুল সা.-এর একটি হাদিসকে অস্বীকার করার দুঃসাহস করা উচিত নয়। চলমান পৃথিবীর মানুষের জন্য এ হাদিস বোঝা দুস্কর কিছু নয়। পাঠক আপনি চিন্তা ভাবনা করলে আপনার কাছেও এর অর্থ আশা করা যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে। 

আজকের মানুষ করুণা, ক্ষমা এবং পরিত্রাণের বিতরণের জন্য একটি সরল ন্যায্যতা তৈরি করতে পারে। এক মুহুর্তের জন্য, আসুন একটি হাদীসের অর্থ কী তা বোঝার চেষ্টা করি।

সারা বিশ্বেই বর্তমানে অসংখ্য দিবস পালিত হয় । নারী দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস, শ্রমিক দিবস, ভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস সহজে গণনা করা যায় না।

বছরের এমন কোনো দিন নেই যেদিন কোথাও কোনো দিবস পালিত হয় না। মা দিবসের অর্থ এ নয় যে, সে দিনই মায়ের খোঁজ খবর নিতে হবে। মোটকথা, আজকের দিনটিকে অনন্য তাৎপর্য দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

একটি বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতাকে এভাবে দিন নির্ধারণের মাধ্যমে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দিন ছাড়াও সপ্তাহের কথাও উল্লেখ আছে। পুলিশ সপ্তাহ বা অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই সপ্তাহ পালনের রীতি রয়েছে।

সবকিছু প্রতীকীভাবে করা হয়। এর কোন আক্ষরিক ব্যাখ্যা নেই।

রমজান মাসকে  রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এ তিন ভাগে বিভক্ত করা কি ঠিক 
রমজান মাসকে  রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এ তিন ভাগে বিভক্ত করা কি ঠিক

 

সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে এই ধরনের বৈচিত্র্যময় সভ্যতারও  বিকাশ ঘটে। এই সংস্কৃতিগুলো সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

আশ্চর্যের বিষয় যে, দেড় হাজার বছর আগে আমাদের প্রিয় রাসুল সা. এই ধারাটি চালু করা হয়েছে। এই ধরনের উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের জন্য দিন নির্ধারণ করে, সভ্য বিশ্ব কীভাবে সমাজে তার প্রভাব প্রয়োগ করতে পারে তা খুঁজে বের করেছে।

এটি আরাধ্য নবীর উদ্ভাবনী শক্তির একটি দৃষ্টান্ত এবং সেই সাথে ইসলামের সাংস্কৃতিক গুণের একটি স্বতন্ত্র সূচক। 

এটাকে আলঙ্কারিকও বলতে পারেন। এর মাধ্যমে রমজানের প্রতিটি দশকের গুরুত্ব যেমন বোঝায়, রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের প্রয়োজনীয়তার প্রতিও স্পষ্ট দিক নির্দেশনা করে। সাধারণত রমজান শুরু কে ঘিরে ইবাদতের প্রতি আমাদের অনেক আগ্রহ থাকে। পরবর্তীকালে, এই মনোযোগ ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। রাসুল (সাঃ) এই হাদীসের মাধ্যমে আমাদের কে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। তদুপরি, রমজান পুরোটাই বিশুদ্ধ রহমতের সময়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়ে সব গুনাহ মাফ করতে হবে। অতঃপর পরিপূর্ণ মুক্তি ও নাজাতের জন্য রমজানের সমাপ্তি পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে।

বিশ্বস্ত মুসলমানদের উচিত রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো। প্রতিদিন নাজাত দেওয়া হলেও শেষ রোজায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোককে নাজাত দেওয়া হয়। তাই শেষ দশককে পরিত্রাণের দশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সকল রোজাদাররা পাপমুক্ত নির্মলতায় ঈদ উপভোগ করেন। রোজা শেষে ঈদ উপহার দেওয়ার তাৎপর্য এখান থেকেই স্পষ্ট।

এমনকি জিলহজের নবম তারিখে আরাফার দিনেও আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তাই পরের দিন ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।

 

একইভাবে, রমজানের পর মুসলমানদের জীবনে ঈদ-উল-ফিতর আসে অপরিসীম উত্তেজনার সাথে। কারণ তারা অবগাহনের মাধ্যমে সুচিতার পবিত্রতা অর্জন করেছে।

প্রথম দশক জুড়ে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দারা রহমতের কোলে ঢলে পড়েন। রমজানের শুরুতেই তারা পবিত্র মাসের সব বরকত পেতে শুরু করে।

দ্বিতীয় দশকে যাদের ছোট ছোট অপরাধ রয়েছে তাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। ইসলামের বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা খুব কঠিন হৃদয় তাদের হৃদয় গলতে সময় লাগে।

কিন্তু এ মাসে আল্লাহ কাউকে বঞ্চিত করেন না। মাস শেষ হওয়ার আগে প্রত্যেক বিশ্বাসীর কাছে জাহান্নাম থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেওয়ার মহা সুযোগ পায়।

সত্যি, কী সুন্দর নবীজীর একেকটি হাদিস! আর আমাদের মালিক পরওয়ার কত দয়াময়! তার পাপী তাপী বান্দাদেরকে কাছে টানার কী সুন্দর পথ তৈরি করে রেখেছেন। 

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সবাইকে এ রমজানে নিজেদের সত্যিকার মুমিন মুসলিম হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।

Leave a Comment