ভাস্ত্রিকা প্রাণায়ামের সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা

প্রাণায়াম হল সুস্থ ও শান্ত জীবনের একটি রহস্য। আমাদের জীবন, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবিধির উপর নির্ভরশীল এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন, রোগ, দুঃখ ও স্বাস্থহীন শরীরের কারণ। দূষণে ভরা আমাদের এই পরিবেশ যা দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে, যার কারণে সঙ্কটের সময় গুলোতে জীবনীশক্তি আমাদের কোন ভাবে সাহায্য করতে পারে না। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে অবশ্যই প্রতিদিন নিয়মিত প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত বলে মনে করা হয়। আমরা আগের কিছু প্রতিবেদনে জেনেছি প্রাণায়াম কি, কত প্রকার, ও তার উপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও জেনেছি কপালভাতি ও অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম করার নিয়ম ও উপকারিতা। আজকে আমরা জানবো ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম ও এবং ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা সম্পর্কে।

ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম

প্রানায়ম অভ্যাসের কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে, যেমন প্রানায়ম অভ্যাসের সবথেকে ভালো সময় কাল বেরকরা যেমন সন্ধ্যাবেলায় প্রানায়ম অভ্যাস গরে তোলা। আপনি যদি সকালে খালি পেটে অভ্যাস করতে পারেন তাহলে সবথেকে ভালো হয়। তবে আপনি যদি সন্ধ্যায় অভ্যাস করতে চান তাহলে খেয়াল রাখবেন খাবার পরে যেন অন্তত ৪-৫ ঘন্টার তফাৎ থাকে। ভস্ত্রিকা অভ্যাসের ক্ষেত্রেও নিয়ম এক, তবে গরমের সময় এই অভ্যাস সকালে সীমিত রাখাই ভাল বলে মনে করা হয়।

  1. ভস্ত্রিকা প্রানায়ম অভ্যাসের জন্য পদ্মাসন অথবা বজ্রাসনে বসতে পারেন। যেহেতু ভস্ত্রিকা প্রানায়ম একটি অগ্রিম স্তরের অভ্যাস, সেক্ষেত্রে এই ধরনের আসনে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে যাদের পক্ষে সম্ভব না, তারা সুখাসনে বসেও অভ্যাস গুলো সম্পূর্ণ করতে পারেন।
  2. মেরুদন্ড, ঘার এবং মাথা সোজা ও স্থির রাখতে হবে । যদি আপনার মেরুদন্ড সোজা করে বসতে অসুবিধা হয়, সেক্ষেত্রে কুশণ বা কম্বলের উপরে বসেও করে নিতে পারেন, যা আপনার মেরুদন্ড সোজা রাখতে সাহায্য করবে ।
  3. ভস্ত্রিকা অভ্যাসের ক্ষেত্রে নিঃশ্বাস্নানেয়া বা ছাড়া দুটোই হয় নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে । তাই লক্ষ্য রাখতে হবে মুখ যাতে বন্ধ অবস্থায় থাকে ।
  4. আজকের এই আধুনিক যোগ বিজ্ঞানে, হাতের অবস্থানের পরিবর্তন করা হয়েছে এবং দেখা গেছে এটি তুলনামূলক ভাবে বেশী লাভজনক। তবে প্রাথমিকভাবে হাত হাঁটুর উপর রেখে অভ্যাস সম্পূর্ণ করা যেতে পারে। দুই হাত মুঠো করে, ঐ অবস্থায় হাত দুটি কাধের সমান্তরালে শরীরের থেকে সামান্য দূরে রাখতে হবে, যাতে হাত উপর-নীচে করতে কোনো অসুবিধা না হয়।
  5. আপনার এই অবস্থায় জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন এবং একই সঙ্গে হাতদুটি সোজা উপরে তুলে, মুঠি খুলে দিন। এবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস ছাড়ুন । নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় হাত দুটি মুঠো করে আবার পুর্বাের আবস্থায় ফিরিয়ে আনুন ।

ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামের উপকারিতা

  • বস্ত্রিকা প্রাণায়াম হল এমন একটি প্রাণায়াম যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে, যদিও এর জন্য নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন হয়।
  • এই প্রাণায়াম ব্যায়াম চমৎকার গলা ব্যথা উপশম প্রদান করে।
  • ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম অনুশীলন করলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
  • এই প্রাণায়ামটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করার জন্য সর্বোত্তম ভাবে কাজ করে ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ।

  • ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম একটি প্রাণায়াম যা ওজন কমানোর জন্য ভালো কাজ করে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট করলেই এটি কার্যকরভাবে পেটের চর্বি এবং ওজন হ্রাস করবে।
  • যাদের হাঁপানি আছে তাদের জন্য বস্ত্রিকা প্রাণায়াম একটি বিশেষভাবে কার্যকর যোগব্যায়াম। কিংবদন্তি অনুসারে, এই প্রাণায়ামের ঘন ঘন ব্যবহার শুধুমাত্র হাঁপানির উপসর্গ কমিয়ে দেয় না বরং স্থায়ীভাবে নিরাময়ও করে।
  • সর্দি, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, শ্লেষ্মা, সাইনাসের সংক্রমণ ইত্যাদি সহ কফ সংক্রান্ত সমস্ত অসুস্থতা নিরাময় হয়। বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া হার্ট এবং মস্তিষ্কের মেরামতের পাশাপাশি ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
  • টনসিল, থাইরয়েড এবং গলার অন্যান্য ব্যাধি সবই দূর হয়।
  • শরীরের বিষাক্ত, বিদেশী পদার্থ দূর হয়, রক্ত পরিষ্কার হয়।
  • মন ও প্রাণ স্থাবর।
  • এই শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশলটি শরীরকে উষ্ণ করে এবং অতিরিক্ত বায়ু, পিত্ত এবং কফ দ্বারা সৃষ্ট অসুস্থতা দূর করে।
    এই প্রাণায়াম দ্বারা নদী প্রবাহ শুদ্ধ হয়। বস্ত্রিকা কুম্ভক সবচেয়ে সুবিধাজনক কুম্ভক।

ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম সম্পর্কে এই নিয়ম এবং উপকারিতা মনে রাখলে আপনি এটি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে পারেন এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা উন্নত করতে সক্ষম হবেন। তবে, প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়িত প্রশিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করে শুরু করা উচিত যাতে আপনি সঠিকভাবে এবং নিরাপদে ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম অনুভব করতে পারেন।

Leave a Comment