যোগব্যায়াম শুধুমাত্র রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করে না বরং রোগ নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে, যোগ অনুশীলন সারা বিশ্বে বিকশিত এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই মিলিয়ন মানুষ যোগ অনুশীলন করে। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, প্রাণায়াম, স্নায়বিক জিমন্যাস্টিকস এবং ধ্যানের সাথে মিলিত যোগের সম্পূর্ণ প্রয়োগ একজন ব্যক্তির মধ্যে থাকা অসীম শক্তিকে জাগ্রত করতে পারে।
জাতিসংঘ ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং এটি ১৯০ টি দেশের ২৬০ টিরও বেশি শহরে পালিত হয়। তাই এই যোগব্যায়ামটিকে আপনার জীবনের অংশ করুন, এটি সুস্থতা এবং মন ও শরীরের শান্তি নিশ্চিত করবে। ওজন হ্রাস, দৃঢ় এবং নমনীয় শরীর, উজ্জ্বল ত্বক, শান্ত মন, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি, যা কিছু আমরা অর্জন করতে চাই, যোগাসনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব। অনেকের শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অবরুদ্ধ করোনারি ধমনী ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ জীবন যাপন করাও সম্ভব।
যোগ হলো এক জীবনদর্শন, যোগ হলো আত্মানুশাসন, যোগ হলো এক জীবন পদ্ধতি। যোগ শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিই নয়, বরং যোগের প্রয়োগ ব্যাধিকে নির্মূল করে। এটি এক বিধাতা প্রদত্ত শুধু শরীরেরই নয়, সমস্ত মানসিক রোগেরও চিকিৎসা শাস্ত্র। যোগ অ্যালোপ্যাথির মতো কোনো লাক্ষণিক চিকিৎসা নয়, বরং রোগের মূল কারণকে নির্মূল করে আমাদের ভিতর থেকে সুস্থ করে তোলার এক উপায়। নিয়মিত যোগাভ্যাসের উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি—
ফিটনেস: শারীরিকভাবে সুস্থ মানেই কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা নয়। তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবেই আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার আবেগ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কথায় বলে, রোগের অনুপস্থিতি স্বাস্থ্য নয়, স্বাস্থ্য হল জীবনের বহুমুখী অভিব্যক্তি। কত আনন্দ আর উদ্যমে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারছেন। সেটাই কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের প্রমাণ।
স্ট্রেস বা চাপ কমায় : সারা দিনের কাজের চাপে আমরা সবাই কমবেশি কাহিল হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে। এর কারণ স্ট্রেস। শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ইয়গা এর থেকে মুক্তি দেয়। ইয়গা, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছল জীবনযাপন করা সম্ভব।
মানসিক শান্তি : একটু যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়াম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মনোঃসংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই বাড়ানো সম্ভব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: নিয়মিত ইয়গা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে দূষণ এত বেশি যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অবশ্যই বেশি হতে হবে।
এনার্জি বাড়ায় : মাত্র কয়েক মিনিটের ইয়গা আপনাকে সারাদিনের জন্য উজ্জীবিত করবে। সকালে উঠে কিছুক্ষণ ইয়গা করলে কাজের সময়ও আপনি সতেজ ও উদ্যমী থাকতে পারবেন। ইয়গার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, হাঁপানি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।
সুস্থ সুন্দর সম্পর্ক : ইয়গা অনুশীলন আমাদের কাছের মানুষদের সঙ্গে, অর্থাৎ বাবা-মা, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিটনেস সেন্টার গড়ে উঠেছে। রাজধানীর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে অনেকেই নিয়মিত ভোরবেলা ইয়গা করেন। আসলে ইয়গা একটি সাধারণ অনুশীলন। দুদিন করে ছেড়ে দিলে হবে না, এর উপকারিতা শুধুমাত্র নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।